🛠️ কাজের প্রক্রিয়া — রিউমর ইনস্পেক্টর

রিউমর ইনস্পেক্টর একটি নির্ভরযোগ্য ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম, যা মোট ৮টি ধাপে বিভ্রান্তিকর তথ্য যাচাই এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। প্রতিটি ধাপ সুপরিকল্পিত ও পেশাগত মান বজায় রেখে পরিচালিত হয়। নিচে প্রতিটি ধাপ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. ফ্যাক্টচেক অনুরোধ গ্রহণ

রিউমর ইনস্পেক্টর নিয়মিতভাবে ফেসবুক পেজ, গ্রুপ এবং হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনের মাধ্যমে ফ্যাক্টচেক অনুরোধ গ্রহণ করে থাকে। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক অনুরোধ আসে আমাদের ফেসবুক গ্রুপের সদস্যদের পক্ষ থেকে। যাচাইযোগ্য অনুরোধগুলো বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট অনুরোধকারীকে সঠিক তথ্য জানানো হয়।

২. সক্রিয় পর্যবেক্ষণ টিম

আমাদের অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষণ টিম সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রচলিত সংবাদমাধ্যমসমূহ নিয়মিত মনিটর করে। কোনো তথ্য অতিরঞ্জিত বা বিভ্রান্তিকর মনে হলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয় এবং সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

৩. দাবির নির্বাচন

ফ্যাক্টচেকের জন্য কোনো তথ্য নির্বাচন করার সময় আমরা কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখি:

• এটি কি অনেক মানুষকে প্রভাবিত করছে?
• বিষয়টি কি উসকানিমূলক বা সংবেদনশীল?
• সত্যতা যাচাই না করলে কি কারও ক্ষতি হতে পারে?
• জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে কি?

যেসব বিষয় আমরা যাচাই করি না:

• কৌতুক, মিম বা ট্রল (যতক্ষণ না তা বিভ্রান্তিকর দাবিতে রূপ নেয়)
• ভবিষ্যদ্বাণী বা মতামতভিত্তিক তথ্য
• বানান ভুল বা মুখ ফসকে বলা বক্তব্য
• যাচাইযোগ্য সূত্র না থাকা
• ধর্মীয় বিষয় যেখানে নির্ভরযোগ্য সূত্র পাওয়া কঠিন
• অলৌকিক বা অবৈজ্ঞানিক দাবি

৪. গবেষণা

যাচাইযোগ্য দাবির ক্ষেত্রে আমরা ব্যবহার করি:

• সার্চ ইঞ্জিন
• ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম
• রিভার্স ইমেজ টুলস
• স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম

বক্তব্য যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। বিশেষজ্ঞ মতামত প্রয়োজন হলে নিরপেক্ষভাবে সেটিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সমস্ত তথ্য সংগ্রহের পর যাচাই ও অনুমতি সাপেক্ষে প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়।

৫. প্রতিবেদন রচনা ও সম্পাদনা

প্রতিটি প্রতিবেদন আমাদের নিরপেক্ষতা নীতির আওতায় তৈরি হয়। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করা হয় না।

সম্পাদনার ধাপসমূহ:

• খসড়া প্রতিবেদন ফ্যাক্টচেকার তৈরি করেন
• উপ-সম্পাদক সূত্র, ভাষা ও গঠন যাচাই করেন
• প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক চূড়ান্ত অনুমোদন দেন
• এরপর প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়

টেকনিক্যাল টিম ও গ্রাফিক ডিজাইনাররা রিপোর্ট প্রকাশের আগে ও পরে প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং ডিজিটাল ব্যানার প্রস্তুত করেন। সোশ্যাল মিডিয়া টিম এটি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে।

৬. ডিজিটাল ব্যানার

প্রতিটি প্রতিবেদনের জন্য একটি তথ্যপূর্ণ ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করা হয় যাতে বিভ্রান্তিকর তথ্যের স্ক্রিনশট এবং সত্য তথ্যের উৎস স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়। এতে করে পাঠক সহজেই আসল সত্য বুঝতে পারেন।

৭. রেটিং প্রদান

তথ্য যাচাই শেষে প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা রেটিং নির্ধারণ করি:

1. মিথ্যা – দাবি অসত্য ও ভুল তথ্য প্রচার করে
2. বিভ্রান্তিকর – আংশিক সত্য হলেও উপস্থাপনায় বিভ্রান্তি রয়েছে
3. বিকৃত – ছবি/ভিডিও ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত বা এডিট করা
4. কৌতুক – ব্যঙ্গ বা হাস্যরস যা সবাই সহজে বুঝতে পারে না
5. আংশিক মিথ্যা – তথ্যের একাংশ সঠিক, বাকিটা ভুল বা ভ্রান্ত
6. সত্য – দাবির সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে, সত্যতা প্রমাণিত

৮. সংযুক্ত কার্যক্রম

• সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার: প্রচার ও পাঠকের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন
• আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কর্মকর্তা: অন্যান্য দেশের ফ্যাক্টচেকারদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করেন
• প্রধান উপদেষ্টা: নীতিগত ও কৌশলগত পরামর্শ দেন

এভাবেই রিউমর ইনস্পেক্টর একটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও পেশাদার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য যাচাই করে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখে চলেছে।

৮. সংশোধন

রিউমর ইনস্পেক্টর সবসময় তথ্যের নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট। আমাদের প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদনে পরবর্তীতে নতুন প্রমাণ, নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য পাওয়া গেলে—আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধনী প্রকাশ করি।

সংশোধনের ক্ষেত্রে আমরা নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখি:

• নতুন প্রমাণ পাওয়া গেলে রিপোর্টের বিষয়বস্তু পুনঃমূল্যায়ন করে সংশ্লিষ্ট অংশ আপডেট করি।
• সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অনুরোধে যদি আমরা যুক্তিযুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাই, তাহলে প্রয়োজন অনুযায়ী তা সংশোধিত প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়।
• রিপোর্টের নিচে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় কী কী পরিবর্তন বা সংযোজন করা হয়েছে।
• সংশোধন শুধু তথ্যগত নয়, ভাষাগত বা প্রাসঙ্গিক ভুল হলেও তা পরিমার্জন করে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রাখি।

আমাদের এই নীতিমালার লক্ষ্য হলো—গুজব ও বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা ও জবাবদিহিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।

উপসংহার:

রিউমর ইনস্পেক্টর শুধু একটি ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম নয়—এটি তথ্য-সচেতন, দায়িত্বশীল ও মানবিক সমাজ নির্মাণের একটি প্রয়াস। প্রতিটি পর্যায়ে আমরা নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করি, যেন জনগণ সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।